পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত
নামাজ হলো ইসলাম শরীয়তের দ্বিতীয় স্তর। আল্লাহ তায়ালার পবিত্রতা ও সৌন্দর্য বর্ণনা করার সর্বশ্রেষ্ঠ স্বীকৃত ইবাদতটি হলো নামাজ। এবং এই নামাজের মাধ্যমে একজন মুমিন আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ করতে পারবে। আপনি যদি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে চান তবে এই পোস্টটি আপনার জন্য। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে।
নামাজের আরবি প্রতিশব্দ হলো সালাত। সালাত অর্থ - ক্ষমা চাওয়া, দোয়া করা ,আল্লাহর সৌন্দর্য বর্ণনা ও আল্লাহর পবিত্রতা। একজন কাফের ও একজন মুমিন ব্যক্তির মধ্যে পার্থক্যই হলো নামাজ। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-নামাজের মাধ্যমে একজন ব্যক্তির ঈমানের দৃঢ়তা প্রকাশ পায়। তাই একজন ঈমানদার ব্যক্তি কে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে। এই পোস্টটি শেষ পর্যন্ত পড়লে আপনারা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের গুরুত্ব ফজিলত সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গভাবে কুরআন ও হাদিসের আলোকে জানতে পারবেন।
পোস্ট সূচিপত্র - পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের গুরুত্ব ফজিলত সম্পর্কে কুরআন ও হাদিসের আলোকে জানুন
- নামাজ কি? এবং একজন মুমিনের জন্য নামাজ পড়া কেন গুরুত্বপূর্ণ?
- নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত
- পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের নিয়ত
- জুম্মার নামাজের নিয়ত ও নিয়ম
- শেষে কিছু কথা
নামাজ কি? এবং একজন মুমিনের জন্য নামাজ পড়া কেন গুরুত্বপূর্ণ?
নামাজ হলো ইসলামের মৌলিক পাঁচটি স্তরের মধ্যে অন্যতম সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বজনীন। একে ইসলামের খুঁটিও বলা হয়। ব্যতীত ঈমান টিকিয়ে রাখা সম্ভব না। তাই আল্লাহ তাআলা বলেন,"তোমরা আমার স্মরণে সালাত আদায় কর।"
একজন মুমিনের জন্য মহান আল্লাহ তায়ালার সাথে সরাসরি কথা বলার একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে নামাজ। আর এই নামাজের মাধ্যমে প্রতিটি ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে সরাসরি কথা বলার সুযোগ পায়। একজন মুমিন ব্যক্তির সুখ-দুঃখ সবকিছুই নামাজের মাধ্যমেই আল্লাহকে জানাইতে পারে। এবং সকল ধরনের সাহায্য কামনা করতে পারে। তাই একজন মুমিনের জন্য নামাজের কোন বিকল্প নাই। ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে রয়েছে কালিমা , নামাজ, রোজা, হজ ও যাকাত। এই পাঁচটি স্তম্ভ, একজন মুমিন ব্যক্তির জন্য আল্লাহ তাআলা ফরজ করেছেন অর্থাৎ প্রত্যেকটি বিধানে মানতেই হবে। এই পাঁচটি স্তম্ভের কোন একটি যদি কেউ না মানে তবে তার ঈমান থাকবেনা। এই কারণে নামাজের গুরুত্ব ইসলামে অপরিহার্য।
নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত
নামাজ ইসলামিক দ্বীনের খুটি। নামাজ মুমিন ব্যক্তিদের নূর। নামাজ সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত। নামাজ জান্নাতের চাবি। নামাজ প্রতিটি মুমিন ব্যক্তির পরিচয়। নামাজ সুস্বাস্থ্যের অন্যতম কারণ। নামাজ কবরের সাথী। নামাজ দোয়া কবুলের অন্যতম মাধ্যম। নামাজ অত্যাধিক নেকি অর্জনের অন্যতম হাতিয়ার। নামাজের এতো গুরুত্ব রয়েছে যা প্রকৃতপক্ষেই বর্ণনা করে শেষ করা যাবেনা। এবং কেয়ামতের দিনে সর্ব প্রথম বান্দাকে জিজ্ঞাসা করা হবে নামাজের বিষয়ে ।এবং নামাজের হিসাব নেওয়া হবে।
সম্মানিত পাঠক বন্ধুরা, যদি আপনাদের দেহে ময়লা বা নাপাক লেগে যায় তখন আমরা কি করি অবশ্যই তা সাবান বা অন্য কিছুর মাধ্যমে ভালোভাবে পরিষ্কার করি। ঠিক তেমনি নামাজ না পড়ার কারণে আমাদের অন্তরে ময়লা জমে যায় ।এই ময়লা পরিষ্কার করার সর্বশ্রেষ্ঠ উপায় হচ্ছে নামাজ। নামাজ যে ব্যক্তি আদায় করে তার অন্তর মন প্রশান্তি লাভ করে। তাদের অন্তর পরিষ্কার হয়ে যায়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
তোমাদের বাড়ির সামনে যদি একটি নদী থাকে। আর ঐ নদীতে প্রতিদিন কেউ যদি পাঁচবার গোসল করে তার শরীরে কি ময়লা থাকবে? উত্তরে সাহাবারা বলল তার শরীরে কোন ময়লাই থাকবে না। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ঠিক তেমনি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ যদি কেউ আদায় করে। এর দ্বারা আল্লাহ তা'আলা সেই ব্যক্তির সকল পাপ মাফ করে দেবেন।(বুখারী ও মুসলিম)
যখন কোন মুমিন ব্যক্তি নামাজ পড়ার উদ্দেশ্যে ওযু করে, মুখমণ্ডল হয় তখন তার যে যে স্থানে পানি স্পর্শ করে সেই সেই স্থানের সকল গুনাহ পানির মতোই ঝরে যায় অর্থাৎ আল্লাহ মাফ করে দেন। অর্থাৎ কোন ব্যক্তি যদি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ সময়মতো আদায় করে তাহলে তার জীবনে কোন গুনাহ থাকবে না। এবং নামাজ পড়ার মাধ্যমে প্রতিটি মানুষ নম্র, ভদ্র, বিনয়ী ও স্পষ্টবাদী হয়ে ওঠে। যে ব্যক্তির নামাজ সুন্দর তার পথ চলা ও ব্যবহার সুন্দর । অর্থাৎ নামাজ মানুষকে আদর্শ মানুষ হিসেবে ।
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের নিয়ত
সালাতুল ফজরঃ
ফজরের নামাজ মোট চার রাকাত। প্রথমে দুই রাকাত সুন্নত এবং পরে দুই রাকাত ফরজ।
সুন্নত নামাজের নিয়্তঃ নাওয়াইতু আন্ উসাল্লিয়া লিল্লা-হি তাআলা রাকয়াতাই সালাতিল ফাজরি, সুন্নাতু রাসুলিল্লা-হি তাআলা মুতাও য়াজজিহান্ ইলা জিহাতিল কা' বাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।
ফরজ নামাজের নিয়তঃ নাওয়াইতু আন্ উসাল্লিয়া লিল্লা-হি তাআলা রাকয়াতাই সালাতিল ফাজরি, ফারজুল্লা-হি তাআলা মুতাওয়াজজিহান ইলা জিহাতিল কা'বাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।
সালাতুল যোহরঃ
যোহরের মোট নামাজ দশ রাকাত। প্রথমে চার রাকাত সুন্নত তারপর চার রাকাত ফরজ তারপর দুই রাকাত সুন্নত।
সুন্নত নামাজের নিয়তঃ নাওয়াইতু আন্ উসাল্লিয়া লিল্লা-হি তাআলা আরবাআ রাকয়াতি সালাতিজ জোহরি সুন্নাতু রাসুলিল্লা-হি তাআলা মুতাওয়াজজিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার ।
ফরজ নামাজের নিয়তঃনাওয়াইতু আন্ উসাল্লিয়া লিল্লা-হি তাআলা আরবাআ রাকয়াতি সালাতিজ জোহরি ফারজুল্লাহি তাআলা মুতাওয়াজজিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার ।
সুন্নত নামাজের নিয়তঃনাওয়াইতু আন্ উসাল্লিয়া লিল্লা-হি তাআলা রাকায়াতাই সালাতিজ জোহরি সুন্নাতি রাসুলিল্লা-হি তাআলা মুতাওয়াজজিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।
সালাতুল আসরঃ
আসরের নামাজ মোট আট রাকাত।এর মধ্যে চার রাকাত সুন্নত ও পরে চার রাকাত ফরজ। কেউ কেউ চার রাকাত সুন্নত নামাজ পড়ে। কিন্তু বেশির ভাগে শুধুমাত্র চার রাকাত ফরজ নামাজ পড়ে।
ফরজ না মাজের নিয়তঃনাওয়াইতু আন্ উসাল্লিয়া লিল্লা-হি তাআলা আরবাআ রাকয়াতি সালাতিল আছরি ফারজুল্লা-হি তাআলা মুতাওয়াজজিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার ।
সালাতুল মাগরিবঃ
মাগরিবের মোট নামাজ পাঁচ রাকাত। প্রথমে তিন রাকাত ফরজ পড়ে দুই রাকাত সুন্নত। তবে কেউ কেউ সুন্নত নামাজের পর দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করে।
ফরজ নামাজের নিয়তঃ নাওয়াইতু আন্ উসাল্লিয়া লিল্লা-হি তাআলা ছালাছা রাকয়াতি সালাতিল মাগরিব ফারজুল্লা-হি তাআলা মুতাওয়াজজিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।
সুন্নত নামাজের নিয়তঃনাওয়াইতু আন্ উসাল্লিয়া লিল্লা-হি তাআলা রাকয়াতি সালাতিল মাগরিবি সুন্নাতু রাসুলিল্লা-হি তাআলা মুতাওয়াজজিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।
সালাতুল এশাঃ
এশার নামাজ মোট ৯ রাকাত। প্রথমে চার রাকাত ফরজ। তারপর দুই রাকাত সুন্নাত। তারপর তিন রাকাত বেতের তবে বিতের নামাজ ওয়াজিব। এছাড়াও কেউ কেউ ফরজ নামাজের আগেই চার রাকাত সুন্নত এবং বেতের নামাজের পরে দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করে থাকে।
ফরজ নামাজের নিয়তঃনাওয়াইতু আন্ উসাল্লিয়া লিল্লা-হি তাআলা আরবাআ রাকয়াতি এশায়ি ফারজুল্লা-হি তাআলা মুতাওয়াজজিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।
সুন্নত নামাজের নিয়তঃনাওয়াইতু আন্ উসাল্লিয়া লিল্লা-হি তাআলা রাকয়াতি সালাতিল এশায়ি সুন্নাতু রাসুলিল্লা-হি তাআলা মুতাওয়াজজিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।
বেতের নামাজের নিয়তঃনাওয়াইতু আন্ উসাল্লিয়া লিল্লা-হি তাআলা ছালাছা রাকয়াতি সালাতিল বেতরি ওয়াজিবুল্লা-হি তাআলা মুতাওয়াজজিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।
জুম্মার নামাজের নিয়ত ও নিয়ম
সাধারণত শুক্রবারের দিনে জোহরের নামাজের পরিবর্তে যে নামাজ আদায় করা হয় সেটি হল জুম্মার নামাজ। জুম্মার মোট নামাজ দশ রাকাত প্রথমে চার কাবলাল জুম্মার তারপর দুই রাকাত ফরজ এবং শেষে চার রাকাত বাদাল জুম্মার নামাজ আদায় করা হয়।
কাবলাল জুম্মার নিয়তঃনাওয়াইতু আন্ উসাল্লিয়া লিল্লা-হি তাআলা আরবাআ রাকয়াতি ছলাতি কাব্লাল জুমুয়াতি, সুন্নাতি রাসুলিল্লাহি তাআলা মুতাওয়াজজিহান ইলা জিহাতিল্ ,ক্বাবাতিশ্ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।
ফরজ নামাজের নিয়তঃনাওয়াইতু আন্ উসকিতা আন্ জিম্মাতী ফাদুজ্জহ্রি,বি-আদায়ি রাকয়াতাই ছলাতিল্ জুমুয়াতি,ফারজুল্লা-হি তাআলা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল্ ,ক্বাবাতিশ্ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।
বাদাল জুম্মার নিয়তঃনাওয়াইতু আন্ উসাল্লিয়া লিল্লা-হি তাআলা আরবায়া রাকয়াতি ছলাতি বাদাল জুমুয়াতি, সুন্নাতি রাসুলিল্লাহি তাআলা মুতাওয়াজজিহান ইলা জিহাতিল্ ,ক্বাবাতিশ্ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।
শেষে কিছু কথা
প্রিয় দিনই ভাই ও বোনেরা যদি আপনারা,এই সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ সহকারে যদি আপনারা পড়েন, তাহলে নিশ্চিত ভাবে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে ভালোভাব জ্ঞান লাভ করতে পারবেন। এবং সেই অনুযায়ী আমল করতে পারবেন। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত সকলকে জানাতে চাইলে এই পোস্টটি শেয়ার করুন। সর্বশেষে এই পোস্টটি পড়ে আপনারা কতটুকু উপকৃত হলেন তা অবশ্যই জানাইতে পারেন। এছাড়াও নিয়মিত ইসলামিক পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url